কলকাতা, ২৭ মে, ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হতেই রাজনৈতিক উত্তেজনা তীব্র হয়ে উঠছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) রাজ্যে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে চাইলেও, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) তাদের প্রভাব বাড়ানোর জন্য জোরালো প্রচার শুরু করেছে। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
বিজেপি টিএমসি সরকারের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ তুলে সমালোচনা জোরদার করেছে। বিরোধী দলের নেতা সুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদে সাম্প্রতিক অশান্তির জন্য টিএমসি-কে দায়ী করেছেন, দাবি করেছেন যে তাদের নীতি অসামাজিক শক্তিকে উৎসাহিত করছে। অন্যদিকে, মমতা ব্যানার্জি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সংঘর্ষকে “পূর্বপরিকল্পিত” বলে অভিহিত করেছেন এবং বাইরের শক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
বিজেপির অভ্যন্তরীণ কলহও প্রকাশ্যে এসেছে। প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মমতা ব্যানার্জির আমন্ত্রণে একটি মন্দির উদ্বোধনে যোগদান নিয়ে দলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিছু নেতা তাকে টিএমসি’র সঙ্গে খুব কাছাকাছি থাকার অভিযোগ তুলেছেন, যা দলের পুরনো এবং নতুন সদস্যদের মধ্যে বিভেদ আরও গভীর করেছে। এটি নির্বাচনের আগে বিজেপির সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করতে পারে।
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) (সিপিআই(এম)) নেতা মহম্মদ সেলিম টিএমসি এবং বিজেপি উভয়কেই রাজনৈতিক স্বার্থে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন। তিনি মুর্শিদাবাদের দাঙ্গার জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এবং মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিভাজনকারী শক্তির প্রতি “নরম মনোভাব” রাখার অভিযোগ তুলেছেন।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, মমতা ব্যানার্জি নিউ টাউনে ২৫ একর জমিতে একটি টেক-বিনোদন পার্ক ‘বিশ্ব আঙ্গন’-এর উন্নয়ন ঘোষণা করেছেন, যা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। তবে বিরোধী দলগুলি এই ঘোষণার সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, এটিকে শাসন ব্যর্থতা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে।
কলকাতা হাইকোর্ট সংঘর্ষ-আক্রান্ত এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন অব্যাহত রাখার নির্দেশ দিয়েছে, এবং সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির আবেদন শুনতে সম্মত হয়েছে। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এবং ভোটারদের মনোভাব কীভাবে গড়ে উঠবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে।